উত্তর-আধুনিকতাবাদ; পর্ব-২ [Post-Modernism; Part-2]

 

The Postmodern Condition: A Report on Knowledge By Lyotard, Jean-Francois Minnepolis: U of Minnesota P,1984, reprint1997

[Translated by Geoff Bennington and Brian Massumi]

জাঁ ফ্রাসো আঁ লিওতার্দ একজন ফরাসী অধ্যাপক, দার্শনিক। তিনি ছিলেন একজন কট্টর মার্ক্সবাদী দলের সদস্য, পরবর্তীতে বহু বছর পরে এসে তিনি সে দল ত্যাগ করেন। লিওতার্দ উত্তর-আধুনিকতাবাদকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে – ‘মহাবয়ানে অবিশ্বাস’ (‘incredulity towards meta-naratives’)। তিনি তাঁর বিখ্যাত “The Postmodern Condition: A Report on Knowledge” এ প্রকাশ পায় উত্তর-আধুনিকতাবাদের অপর অর্থ হলো ‘দশা’। এখানে লিওতার্দ বিশ্লেষণ করেছেন কিভাবে জ্ঞানের বৈধতা বিংশ শতাব্দীর সমাজে এসে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। উত্তর-আধুনিকতাবাদী অবস্থা মৌলিকভাবে জ্ঞানের ভিন্নরকম একটি চিত্র। যা আলোকময়তা পরবর্তী সময়ে আবির্ভূত হয়, বিশেষ করে ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়কার প্রাক-শিলা এবং তথ্য নির্ভর সময়গুলিতে। এ লেখায় লিওতার্দ জ্ঞানের স্বত্ত/নীতি এবং সুপারিশমালার বৈচিত্র উল্লেখ করে বলেন কিভাবে তা সমাজে বিশেষ বৈধতা লাভ করে।

লিওতার্দ বিশ্বাস করতেন কম্পিউটার, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন্ ভাষাগত জ্ঞানকান্ড এবং তথ্য প্রক্রিয়া সমাজ এবং অর্থনীতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন জ্ঞানের মর্যাদা এ সময়ে এসে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যে স্বত্ত সমাজ জ্ঞানের বৈধতা দানে ব্যবহার করে সেই একই স্বত্ত ব্যবহৃত হয় সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে এবং এর ফলশ্রুতিতে সরকার, আইন, শিল্প এবং সমাজের মূল উপাদানগুলির ক্ষেত্রেও বৈধতা, যাকিনা আলোকময়তার সাথে যুক্ত তাকে লিওতার্দ মহাবয়ান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, হ্যাবারমাস আলোকময়তার যে প্রয়াস ধরে এগোতে চান সেটি কর্তৃত্বশীল, সমগ্রবাদী এবং সেটি নিজেকে সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য বলে দাবী করে যেমন ঃ খ্রিষ্টত্ব, মার্ক্সবাদ কিংবা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। এই মহাবয়ান যা ব্যাখা ও স্বস্তি প্রদান করতে পারার ক্ষমতা রাখে বলে দাবী করে তা বাস্তবে ইলিউশন, ভিন্নতা, বিরোধ ও বহুরূপতাকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে এগুলিকে চর্চা করে। এই পরিস্থিতিতে লিওতার্দ উত্তর-আধুনিকতাবাদের বিখ্যাত মহাবয়ানের প্রতি অবিশ্বাস, সংজ্ঞাটি প্রদান করেন। যেখানে বলা হয়েছে, যেহেতু মহাবয়ান আর বিশ্বাস যোগ্য নয় অথবা আশার উদ্রেক করে না সেহেতু আমরা কেবল মাত্র ক্ষুদ্র বয়ানের সিরিজ কে কোন স্থানে বিশেষ কোন দলের কর্মকান্ডের ভিত্তি হতে পারে বলে আশা করতে পারি, যা কিনা সাময়িক, অস্থায়ী, ক্ষণিকরে জন্য এবং আপেক্ষিক। তার লেখা অনুসারে, উত্তর-আধুনিকতাবাদ এভাবে আলোকময়তার প্রধান লক্ষ্য যথা ইতিহাস ও সাবজেক্টের একীভূত লক্ষ্যের ধারণা কে বিনির্মাণ করে। লিওতার্দ গুরুত্ব দিয়েছেন Performativity’র উপর অর্থাৎ cybernetic সমাজে জ্ঞানের বৈধতা প্রকাশ পাবে তা কিভাবে কাজে প্রদর্শন করা হবে এবং তার সর্বনিম্ন দাবি মিটিয়ে কিভাবে সর্বোচ্চ ফলাফল নিশ্চিত করবে তার উপর। মানুষের কার্য সমাধার কৌশলের উপর নির্ভর করেছে জ্ঞানের বৈধতা প্রকাশের বিষয়টি। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বিষয়টি সমস্যা সৃষ্টি করে কারণ Performativity কোন নৈতিকতার দিকে মনোযোগ দেয় না। এর ফলস্বরূপ অপরিহার্যভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। লিওতার্দ এমন একটি কাঠামো খুঁজতে চান, যা কার্য সম্পাদনের দক্ষতাকে বৈধতা দিবে, মহাবয়ানের স্বীকৃতি ছাড়াই। তিনি এটা বিশ্বাস করতেন না যে, প্রত্যেকের কাজই নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর প্রকাশ ঘটাবে বরং তিনি বিশ্বাস করতেন বৈধতার এমন একটি প্রকিয়া হবে যা পুরাতন প্রশ্নের নতুন উত্তর খুঁজতে জোর দিবে।

Read More…

উত্তর-আধুনিকতাবাদ; পর্ব-১ [Pos-Modernism; Part-1]

 

Literary Theory: A Guide for the Perplexed By Mary Klages Continuum Press, January 2007

একটি পদ হিসেবে ‘আধুনিক’ বা modern শব্দটি আবির্ভূত হয় ১৬ শতকের শেষ ভাগে। কথাগুলো রেমন্ড উইলিয়ামসের, যিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত মার্ক্সবাদী সাহিত্য তাত্ত্বিক, সাহিত্য সমালোচক। তিনি তাঁর ‘Key Words. A Vocabulary of culture and society’ গ্রন্থে বলেছেন যে, modern শব্দটি যখন উদ্ভূত হলো তখন এটি বোঝাতো “বর্তমান”কে, “এখন”কে। তার মানে হচ্ছে, আধুনিক শব্দের সাথে ইতিহাসের ধারণা যুক্ত। আধুনিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল “যা কিছু অতীত” তার থেকে একটি সীমারেখা, একটি ভিন্নতা স্পষ্ট করার জন্য। যা দিয়ে বোঝানো হয় মধ্যযুগীয় নয়, আধুনিকের মানে হচ্ছে অতীত নয়। অর্থাৎ আধুনিক শব্দের সাথে ইতিহাস, সময়, কাল, যুগ – এগুলো যুক্ত। উত্তর-আধুনিকতাবাদ কিন্তু আধুনিকের পরের কোন পর্বকে নির্দেশ করেনা। আধুনিকতাবাদী চিন্তুকদের মতে, আধুনিকতাবাদ বা modernism হচ্ছে একটি দৃষ্টিভঙ্গী, একটি মনোভঙ্গী। একই সাথে কিছু চিন্তুক বলছেন, উত্তর-আধুনিকতাবাদও হচ্ছে একটি দৃষ্টিভঙ্গী এবং একটি মনোভঙ্গী।

উত্তর আধুনিকতাবাদ একটি জটিল বিষয়। কিংবা অন্যভাবে বললে উত্তর আধুনিকতাবাদ হলো এক সেট ধারণা। এর আবির্ভাব মূলত আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে একাডেমিক গবেষণার পরিসরে। উত্তর আধুনিকতাবাদকে কোন সংজ্ঞায় বেঁধে ফেলা সম্ভব নয়। কেননা বিভিন্ন জ্ঞানকান্ডে এটি এসেছে- বিশেষভাবে বললে – শিল্প, স্থাপত্য, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, সামাজিক বিজ্ঞান, যোগাযোগ, ফ্যাশন এবং প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেএে। এই ধারণাকে ঐতিহাসিকভাবে স্থাপন করা যায় না কেননা ঠিক কবে থেকে উত্তর-আধুনিক ধারণার সূত্রপাত হয়েছে তা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় না। তিনি তাঁর লেখায় বলতে চেয়েছেন উত্তর-আধুনিকতাকে বুঝবার জন্য আমাদেরকে প্রথমেই আধুনিকতাকে বুঝতে হবে, কেননা এর মধ্য থেকেই উত্তর-আধুনিকতার যাত্রা শুরু হয়েছিল।

আধুনিকতাবাদ হলো একটি নান্দনিক আন্দোলন (aesthetic movement)। এই আন্দোলন ছিলো চিত্রশিল্প, সঙ্গীত, সাহিত্য, নাটক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পুরাতন ভিক্টোরিয়ান সময়কালের ধ্যান-ধারণাকে খারিজ করা হয় আর এ সকল ক্ষেত্রেই নতুন ধারার প্রবর্তন করা হয়। এ সময় ১৯১০-১৯৩০ পর্যন্ত সময়কালকে period of “high modernism” বলা হচ্ছে। এ সময়ের তাত্ত্বিকেরা হলেন Woolf, Joyce, Eliot, Pound, Stevens, Proust, Mallarme, Kafka, and Rilke যাদেরকে বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতাবাদের প্রবক্তা বলা হয়।

লেখক আধুনিকতাবাদের কিছু বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন ঃ

১. এরা impressionism এবং subjectivity’র উপর গুরুত্ব দিতো। তারা কি দেখি এই প্রশ্নের উপর জোড় না দিয়ে আমরা কিভাবে দেখি তার উপর জোড় দিতো।

২. objectivity হতে দূরে সরার কথা বলা হচ্ছিল এবং সবকিছু বিমূর্তভাবে উপস্থাপনের কথা বলা হচ্ছিল।

৩. বিভিন্ন ধরন – এর পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছিল। যেমনঃ উপন্যাসগুলো হবে কবিতার মতো এবং কবিতা হবে ডকুমেন্টারীর মতো।

৪. নতুন fragmented forms তারা গ্রহন করেছিল।

৫. reflexivity বা আত্মসমালোচনামূলকতার উপর জোর দিয়েছিলো যাতে কবিতা, গল্প, উপন্যাস – এ তাদের নিজেদের আকৃতিকে সামনে তুলে ধরেছিলো।

৬. জন সংস্কৃতিতে “high” এবং “low” – এই ধারণাকে তারা খারিজ করেছিলো।

Read More…

Silence Death of a River “TURAG”

Introduction

Water pollution in Dhaka city has reached alarming levels and is posing significant threats to health and economic activity. Industry and associated industrial pollution has been gradually increasing in Bangladesh with the manufacturing sub-sector growing at a rate of five percent (Bhattacharya et al., 1995). Since the birth of Bangladesh due to rapid and unplanned urbanization and industrialization the rivers surrounding the capital city, including the Turag (is the upper tributary of the Buriganga) have been steadily experiencing complicated problems like pollution and encroachment that have almost suffocated these valuable lifelines of the city.

How TURAG is polluting

Turag river being mainly polluted by the discharge of untreated industrial effluent and urban wastewater, agrochemicals, sewage water, storm runoff, solid waste dumping, oil spillage, sedimentation and encroachment. The signs of physical water contamination may become obvious through bad taste, offensive odors, unchecked growth of aquatic weeds, and decrease in the number of aquatic animals, floating of oil and grease, coloration of water and so on. (Annex-A)

Impacts of river TURAG pollution

The river TURAG is a typical example of serious surface water pollution in our country. In the present scenario, this river carries only wastewater during the months (November to April) of the dry season and becoming toxic during this period. The level of pollution is so high that no aquatic species can survive in it and the situation is getting worse day by day. Test results during the dry season at eight points along the river found the level of dissolved oxygen within 0.6 to 1.8 mg/l at five points and zero at other points. The requisite level of oxygen is more than 5 mg/l for the survival of aquatic lives. (Annex-B) At this period, pollution is so acute that hardly any hydro-organisms can tolerate it and eventually, fish of many species are found floating dead in the river water. Due to over spilling of pollutants during the rainy season, the agricultural lands have lost their crop growing capacity and hence remain unused all the year round. Of course, some of the lands are now experiencing other uses like housing project and brickfield development. These land uses eventually cause illegal occupation of riverbanks and increase pollution concentration in the river.

Read More…

টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পঃ একটি নৃবৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ

নৃবিজ্ঞান ‘মানবতার বিজ্ঞান’। মানব সমাজ এবং সংস্কৃতি বিশ্লেষণে ‘নিগৃহীত’, ‘শোষিত’ মানুষের চিন্তা চেতনা, জীবনবোধ, মূল্যবোধকে বরাবরই তুলে আনতে চেয়েছে। তাই বর্তমান সময়ের আলোচিত ইস্যুগুলোর মাঝে ‘টিপাইমুখ বাঁধ’ প্রকল্প নৃবিজ্ঞানে আলোচনার বিষয় হতে পারে। উন্নয়ন নৃবিজ্ঞানের আলোচনায়, এসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিকল্পনা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন। কেননা মানব সমাজ এবং সংস্কৃতিতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন দূর্যোগের কারণ ও মানবতার বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।

ভারতের মনিপুর রাজ্যের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে বরাক ও টুইভাই নদীর মিলনস্থল থেকে ৫০০ মিটার ভাটিতে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি সিলেটের জাকিগঞ্জ সীমান্তের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। ১৯৫৪ সাল থেকে এ বাঁধ নির্মানের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য এ প্রকল্প ভাবা হয়। কিন্তু বর্তমান প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পানি বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ। পানি সেচ সুবিধাও পাওয়া যাবে এ প্রকল্প থেকে। এ প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১৬৩.৮৬ কোটি রুপি।

নৃবৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনায় উন্নয়ন কর্মকান্ডের এসব ইস্যু বরাবরাই আলোচিত, যেখানে নৃবিজ্ঞানীরা প্রায়শই উন্নয়নের লক্ষ্য ও ক্ষমতা সম্পর্কের মাঝে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেছেন। এসকোবার (১৯৯১) নৃবিজ্ঞানীদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে এ ধরনের অংশগ্রহণকে আপোষমূলক বলে উল্লেখ্য করেছেন। কেটি গার্ডনার ও ডেভিড লুইস (১৯৯৬) নৃবিজ্ঞানীদের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের জন্য তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখতে বলেছেন। যেগুলো হল ১) অংশগ্রহন (Access) ২) প্রভাব (Effect) ৩) নিয়ন্ত্রন (Control)। এক্ষেত্রে অবশ্যই দৃষ্টিভঙ্গি এবং চর্চার বৈচিত্রতা সমূহকে বিবেচনায় রাখতে হবে; যেখানে বহুস্বর উঠে আসবে।

একজন উন্নয়ন নৃবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমার চিন্তা চেতনায় বিতর্কিত এ টিপাইমুখী প্রকল্পের প্রারম্ভিক লক্ষ্য হতে পারে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে কিনা। প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানী হিসেবে অংশগ্রহন (Access) এর বিষয়টি বিবেচনায় আনতে স্থানীয় জনগোষ্টির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে শোষণ এবং দারিদ্রতার উৎপাটনের সাথে সাথে। যেখানে প্রতিটি ব্যাক্তি একই সাথে উপকৃত হবে। এটা যেমন হবে জাতীয় পর্যায়ে তেমনি তা হতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, যদিও অনেকে সামাজিক সম্পর্কগুলো ক্ষুদ্র পর্যায় থেকে দেখতে অভ্যস্ত। এখানে অবশ্যই বিবেচনার বিষয় হল কে কিভাবে উপকৃত হচ্ছে, নারী পুরুষের সম্পর্ক কিভাবে তা প্রতিস্থাপন করছে। এখানে ঐতিহাসিকতাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন আছে। যেমন এক্ষেত্রে Mail Sud Rural Development Project এর কথা প্রাসঙ্গিক । তবে প্রস্তাবিত টিপাইমুখী বাধ প্রকল্পে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি বিবেচনার জায়গা রাখে তা হল Effects বা প্রভাবের বিষয়টি। বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবে সমূহ বিবেচনা না করার দরুন তা মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং অকার্যকরতায় পর্যবসিত হয়েছে। যদি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এবং উত্তরকালীন সময়ে প্রকল্পের প্রভাব বিবেচনা করা হয় তাহলে তা কার্যকরী কোন প্রকল্প হতে পারে। অন্যথায় তা গুরুতর কোন সামাজিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে Kariba Dam (জাম্বিয়া ও জিম্বাবে) এর উদাহরণ প্রাসঙ্গিক বলা যেতে পারে। যেখানে হাইড্রোলিক বাধ স্থাপন করা হয় এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরো অংশই চলে যায় দূরবর্তী শহরাঞ্চলে। স্থানীয় জনগোষ্টিকে বাধ্যতামূলকভাবে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয় এবং স্থানীয় জনগোষ্টির নিকট সরকারের যে প্রস্তাবনা ছিল তারও কোন বাস্তবায়ন সাধন করা হয়নি। ফলে প্রাযুক্তিক এবং একই সাথে পানির সংকট চরম দূর্ভোগের সৃষ্টি করে। যা বেশির ভাগ লোকের স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করে। এ ধরনের দূর্ভোগের মধ্য দিয়ে তাদের শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভূমি ছেড়ে চলে যেতে হয়। ফলে স্থানীয়ভাবে বিরাজমান সামাজিক সম্পর্কগুলো ভেঙ্গে যায়।

Read More…

পরিবেশ নৃবিজ্ঞানে নতুন দিক নির্দেশনা

মানব অভিযোজন গবেষণা এবং পরিবেশ নৃবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে এই আলোচনায় কিছু নতুন দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নতুন দিক নির্দেশনা মূলত দেয়া হয়েছে বৈশ্বিক পরিবেশের পরিবর্তন, রাজনৈতিক বাস্তুবিদ্যা, নগর প্রতিবেশ এবং পরীক্ষণ মূলক নৃবিজ্ঞানের (experimental anthropology) পাঠের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। আলোচনার সুবিধার্থে এই রচনায় ব্যবহৃত ইংরেজী প্রত্যয়গুলো অপরিবর্তীত রেখেই ব্যবহার করা হয়েছে।

বৈশ্বিক পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে মানুষের অভিযোজন (Human Adaptability to Global Environmental Change)

বৈশ্বিক পরিবেশের পরিবর্তন নিয়ে নতুন গবেষণা agenda টি শুরু হয়েছে ১৯৯২ সালে National Research Council (NRC) থেকে প্রকাশিত বই ‘Global Environmental Change: Understanding the Human Dimensions’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে। শুরুর দিকে এর কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল আবহাওয়া পরিবর্তন, জীব বৈচিত্র্য (Biodiversity) দূষণ, আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তি, ওজন স্তরের পরিবর্তনের ফলে UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব প্রভৃতি সম্পর্কে, একবিংশ শতাব্দীতে যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে এটি পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রম পুঞ্জিত প্রভাব সম্পর্কে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে Human Dimension Research যা নির্দেশ করে সেই সামাজিক প্রক্রিয়াকে, যা পরিবেশের সাথে বাজার ব্যবস্থা, সম্পত্তির অধিকার, বৈধ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধের সম্পর্ক তৈরী করে।

National Research Council – এর বিজ্ঞানীদের বিশেষজ্ঞ দল বাহক (expert panel) দ্বারা ১৯৯২ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলোর উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।

প্রথমত, ভূমি রক্ষা এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনকে বোঝা।

দ্বিতীয়ত, সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়াকে বোঝা।

তৃতীয়ত, শক্তি সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর নির্দেশনার ক্ষেত্রে শাসন যন্ত্র এবং প্রতিষ্ঠানকে নতুনভাবে নকশা করা।

চতুর্থত, প্রান্তিকতা এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াকে মুল্যায়ন করা।

পঞ্চমত, জনগণকে বোঝা এবং পরিবেশের সাথে আন্তঃক্রিয়া ঘটানো।

বৈশ্বিক পরিবর্তন নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বের সাথে কাজ করেছিল সেগুলো হল – National Science Foundation (NSF), The National Oceanic and Atmospheric administration (NOAA) Ges National Institute for Child health and Human development (NICHI). তবে বৈশ্বিক পরিবর্তন পাঠের জন্য যে দুটি কেন্দ্র সৃষ্টি হয়েছিল তা হল –

প্রথমত, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

দ্বিতীয়ত, Carregic Mellan বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে বৈশ্বিক পরিবর্তনের অখন্ড পাঠকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দুটোই ১৯৯৬ সাল থেকে NSF – থেকে সাহায্য পেয়ে আসছে।

পরিবেশ বিজ্ঞানে নতুন কিছু ব্যাপার সনাক্তকরণ হচ্ছে যেমন – শারীরতত্ত্বীয় জীববিদ্যার (Biophysical) অনিশ্চয়তার সাথে সামাজিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সম্পর্কিত, তাই সামাজিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে নিশ্চিত করা জরুরী। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে – মানুষের কর্মকান্ড যেমন – বৃক্ষ উজাড়, শক্তিভোগ (energy consumption) প্রভৃতির ফলেই বৈশ্বিক পরিবেশে পরিবর্তন হচ্ছে আর এগুলোর খারাপ প্রভাব পড়ার আগেই মানুষ এদের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত হয়ে পড়ে। আর এজন্যই দরকার হয়ে পড়ে পরিবেশগত সামাজিক বিজ্ঞানের (Environmental Social Science)।

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে পরিবেশগত সামাজিক বিজ্ঞানে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে তা হল –
১) সেই সকল সামাজিক নির্ধারকসমূহকে বোঝা যেগুলো প্রকৃতিগতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ।
২) প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের উৎসগুলোকে বোঝা।
৩) আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আরও বেশী অঞ্চলভিত্তিক এবং সঠিক করা।
৪) মানব জাতি পরিবেশের নতুন নতুন বিষ্ময়ের প্রতি আরও ভালভাবে কিভাবে সাড়া দিতে পারে তা উন্নত করা।
৫) সম্পদ ব্যবস্থাপনায় (Resource Management) প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বা ব্যর্থতার প্রতি যে শর্ত আছে তা বোঝা।
৬) অভিবাসনের ভূমিকাকে বিশেষভাবে বোঝা।
৭) সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের বোঝা পড়াকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রাখা।
৮) সামাজিক বিজ্ঞানের ডাটা তৈরীর ক্ষেত্রে আরও অগ্রসরপূর্ণ ক্ষমতা তৈরী করা।

বর্তমান অবস্থার অগ্রসরতার জন্য সকল সামাজিক বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে একে অপরের সাথে যেমন যোগাযোগ বৃদ্ধি করা দরকার তেমনি Biophysical বিজ্ঞানের সাথেও যুক্ত হওয়া দরকার। পরিবেশগত নৃবিজ্ঞান এক্ষেত্রে তার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। বৈশ্বিক পরিবর্তনে নৃবিজ্ঞান দুটি প্রধান অবদান রাখতে পারে।

প্রথমত – নৃবিজ্ঞান, স্থানীয় ভিন্নতাগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখতে পারে। তারা স্থানীয় জনগণের ভূমি ব্যবহারের ধারা খুঁজতে পারে যা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। আর এর ফলে, তারা স্থানীয় জনগণ যে প্রত্যয় (term) ব্যবহার করে এবং শ্রেণী বিভাগ করে এগুলো অর্থপূর্ণভাবে বুঝতে পারবে।

দ্বিতীয়ত – গুরুত্বপূর্ণ অবদানটি সম্পর্কিত, তথ্য সংগ্রহ এবং এর পদ্ধতির সাথে। নৃবিজ্ঞানীরা এর মাধ্যমে প্রান্তিক সামাজিক বাস্তবতা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আচরণের ভিন্নতা বোঝা যায়। নৃবিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে মাঠকর্মের প্রতি জোর দেয়।

Read More…

চলচ্চিত্র পর্যালোচনা – আলী

২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘Ali’ হচ্ছে একটি আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র । প্রখ্যাত পরিচালক মাইকেল মান (Michael Mann) এটি পরিচালনা করেন । কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী’র জীবনীকে কেন্দ্র করে ছবিটি আবর্তিত হয়েছে; বিশেষ করে ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ অত্যন্ত নিপুণভাবে চলচ্চিত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছে । এর মধ্যে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে সনি লিসটন এর নিকট থেকে হেভিওয়েট খেতাব ছিনিয়ে নেওয়া, তাঁর ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমালোচনা এবং ব∙িং থেকে বহিস্কৃত হওয়ার মত বিষয়গুলো । আরও রয়েছে জো ফ্রেইজার এর সাথে লড়াইয়ের মাধ্যমে ব∙িং – এ প্রত্যাবর্তন এবং জর্জ ফোরম্যান এর সাথে তাঁর লড়াই যা ‘Rumble in the Jungle’ নামে খ্যাত এবং চ্যম্পিয়নশীপ পুনরুদ্ধার । এই চলচ্চিত্রটিতে ম্যালকম এ∙ এবং মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়র) এর গুপ্তহত্যার পর আমেরিকার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা হয়েছে ।

মুষ্টিযুদ্ধের কিংবদন্তী ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে এর জীবনের চুম্বক অংশগুলোকে কেন্দ্র করে ইতিহাসনির্ভর এই চলচ্চিত্রটি রূপায়িত হয়েছে । চলচ্চিত্রটির শুরুতেই দেখানো হয়েছে ক্লের মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের কয়েকটি খন্ডচিত্র যার ফাঁকে ফাঁকে দেখনো হয়েছে রাস্তায় জগিং এর সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, একজন নিগ্রো নেতার (ম্যালকম এ∙) ভাষণ, পিতার সাথে ক্লের ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি এবং সনি লিসটন এর জনৈক মুষ্টিযোদ্ধার বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার দৃশ্য ।

চলচ্চিত্রটির মূল অংশ শুরু হয় ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লের সাথে সনি লিসটন এর লড়াই এর মধ্য দিয়ে যেখানে দেখা যায় সনি লিসটন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েও ক্লের কাছে পরাজিত হন এবং এর ফলে ক্লে প্রথমবারের মত হেভিওয়েট চ্যম্পিয়নশীপ খেতাব অর্জন করেন। এরপরের দৃশ্যগুলো হচ্ছে ক্লের একান্ত পারিবারিক কিছু বিষয় এবং রাস্তায় জনগণ বিশেষত কালো (আমেরিকান নিগ্রো) মানুষদের কাছে অভিনন্দিত হওয়া। এ পর্যায়ে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় দেখানো হয় যেমন – ক্লে বলেন যে, “আমি জনগণের চ্যম্পিয়ন।” তিনি আরও বলেন যে, “ আমি দাস পরিচায়ক ক্লে নামে আর পরিচিত হতে চাই না ।”

Read More…

বিশ্বায়ন এবং অভিবাসন

একুশ শতকের বিশ্বব্যাপী একটি অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো অভিবাসন। যদিও মানব ইতিহাসে অভিবাসন প্রথম থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথাপি সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যাজাগতিক এবং রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণী কর্মকাণ্ডগুলোতে অভিবাসন উল্লেখ্যযোগ্য আগ্রহের জায়গা করে নিয়েছে। অভিবাসন অধ্যয়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটেছে। এ কারণে বর্তমান বিশ্বায়নের প্রবাহের প্রেক্ষাপটে বিশ্বায়নকে সংজ্ঞায়ন এবং চিহ্নিত করণের ক্ষেত্রে অভিবাসন অধ্যয়ন জ্ঞানকান্ডীয় পরিসরে একটি বহুল অধীত বিষয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। উত্তর-আধুনিক চিন্তা চেতনা এবং বিশ্বায়নের স্রোতধারা অভিবাসন অধ্যয়নে এক নতুন ধারার সংযোজন করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বায়ন যেহেতু অন্যতম সমাদৃত একটি ধারণা এবং অভিবাসন এ গতিশীল স্রোতধারার একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া তাই অভিবাসনকে এ প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বায়ন প্রেক্ষাপটে মানুষের গতিশীলতা অনেক বেড়ে গেছে। আর সংস্কৃতিকে বুঝবার ক্ষেত্রে স্থায়ী আবাসের চাইতে মানুষের গতিশীলতা বা ভ্রমনের গবেষণা (study of travel) অনেক বেশি সহায়তা করে (Clifford, 1988)। ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং প্রেক্ষিতের মধ্য দিয়ে বিশ্বায়ন প্রত্যয়টিকে প্রত্যয়ন করা হয়ে থাকে। এ বহুমাত্রিকতা অভিবাসন অধ্যয়নের ক্ষেত্রেও নব্য চিন্তা চেতনার সূত্রপাত ঘটায়। তাই অভিবাসনকে নিয়ে নব্য ধ্র“পদী বা ক্রিয়াবাদী, নব্য মাক্সবাদী বা কাঠামোবাদী, নির্ভরশীলতাবাদী যে চিন্তা চেতনা দেখা যায় তা বিশ্বায়নের গতিশীল প্রেক্ষাপটে অভিবাসন অনুধাবনকে এক অর্থে দুস্কর করে তোলে। এর বিপরীতে দাড়িয়ে উত্তরাধুনিকতাবাদ যে প্রশ্ন তোলে, তারই প্রেক্ষিত বিশ্বায়নের অভিবাসনকে দেখা হয়।

বিশ্বায়ন কি?

বিশ্বায়নকে কেন্দ্র করে যে তত্ত্বীয় প্রচেষ্টা চিন্তুকদের করতে দেখা যায় তার মাঝেও বহুমুখী বৈচিত্রতা রয়েছে। বিশ্বায়ন তত্ত্বের ধারণায় দুটো বিপরীতমুখী ধারণা রয়েছে। একটি ধারণা বিশ্বায়নকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে যা অঞ্চল এবং রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসবে। অন্যদিকে এর বিপরীত ধারণাটি হল বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি অসমতা তৈরি করে এবং বৈশ্বিক ও স্থানিক পর্যায়ে এটা শোষণ প্রক্রিয়াকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করে।

বিশ্বায়ন মানুষ প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও জাতির সংযুক্ততা এবং সমাজ জীবনে বৈশ্বিক আন্তঃসংযোগ এর কথা বলে (Gilder 1989, Kaku 1997, Best and Kellner 1997)। Freidman (2005) যুক্তি দেন, বৈশ্বিক পুঁজিবাদী পদক্ষেপ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন মানুষ, সমাজ এবং জাতিকে সংযুক্ত করে। অর্থাৎ তিনি মানুষের পারস্পরিক সংযোগের কথা দিয়ে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে বুঝতে চান। অর্থাৎ বিশ্বায়ন বলতে বোঝান হচ্ছে ক্রমাগত আন্তসম্পর্কিত এক বিশ্ব। যেখানে অধিক থেকে অধিক লোক এখন পারস্পরিক আন্তঃযোগাযোগের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। যেমনঃ আমদানিকৃত পণ্য এবং ভ্রমণের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট যে আন্তসম্পৃক্ততা। এটি শুধুমাত্র বুর্জোয়া শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই বরং এটি সকলের জন্যই উন্মুক্ত। এ কারণে আমেরিকান সফট্ওয়্যার কোম্পানিতে ভারতীয় সফট্ওয়্যার প্রকৌশলী কাজ করছে, আবার আমেরিকার হিপ-হপ জাপানে খুবই জনপ্রিয় আবার এ্যারাবিয়ানদের কাছেও বর্তমানে ম্যাকডোনাল্ডস জনপ্রিয়।

অর্থাৎ বিশ্বায়ন হল Motion of…………. Everything

Culture/Place/Identity

বিশ্বায়ন একটি ক্রমবর্ধমান এবং নিবিড় বৈশ্বিক আন্তসম্পর্ককে নির্দেশ করে। এন্থনি গিডেন্স (১৯৯০) বিশ্বায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, বিশ্বায়ন হলো বিশ্বব্যাপী সামাজিক সম্পর্কের নিবিড়ীকরন যা বিচ্ছিন্ন জনপদগুলোকে এমনভাবে সংযুক্ত করে যে স্থানীয় ঘটনাগুলো আদল পায় বহুদুরের ঘটনার মধ্য দিয়ে, বিপরীতভাবে একই ভাবে স্থানীয় প্রভাবও পরিলক্ষিত হতে পারে বহুদুরের কোন এক পরিসরে।

Read More…

ধর্ম ও ক্ষমতার সম্পর্কঃ তালাল আসাদ

তালাল আসাদ একজন সুদানী নৃবিজ্ঞানী । তিনি ১৯৩৩ সালে সৌদি আরবে জন্ম গ্রহন করেন । তিনি বড় হন ভারত ও পাকিস্তানে । ১৯৫৯ এ বৃটেনের এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্মাতক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেন । ১৯৬৮ তে অক‌‌‌‌ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী পান। তিনি বহু বছর বৃটেনের হাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানে শিক্ষকতা করেন । ১৯৮৯ হতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনারত । বর্তমানে সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কে নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক।

১৯৭৩ সালে তার সম্পাদিত “এ্যানথ্রপলজি এ্যান্ড দ্যা কলোনিয়াল এনকাউন্টার” প্রকাশিত হয় । এই বইটির মধ্য দিয়ে তিনি পশ্চিমা নৃবৈজ্ঞানিক মহলে আলোড়ন ফেলেন । তিনি মূলত উপনিবেশিকতা এবং নৃবিজ্ঞানের সম্পর্কের সমালোচনার সংগে জড়িয়ে আছেন । তিনি গত দশকগুলোতে তার তত্ত্বকে অধিকতর বিকশিত করেছেন এবং এমন ধরনের ঐতিহাসিক নৃবিজ্ঞানের চর্চার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন যার লক্ষ্যবস্তু হবে পশ্চিমের সাংস্কৃতিক হেজেমনি । তার প্রবন্ধের বিষয় হচ্ছে ঃ সংস্কৃতি এবং অনুবাদ, মানবাধিকার, এজেন্সি, পশ্চিমা কর্তৃক ইসলামের পরিবেশন, এশিয়ান ধর্ম ইত্যাদি ।

তার প্রধান আগ্রহের বিষয় হচ্ছে ধর্মের বিভিন্ন স্বরূপ ও সেক্যুলারিজমকে মৌলিকভাবে বোঝাপড়ার চেষ্টা; এ ক্ষেএে আধুনিকতার সাথে এ দুয়ের সম্পর্কই থাকে তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে । এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে বেড়ে ওঠা ধর্মীয় আন্দোলনগুলিও তার আগ্রহের জায়গা, যেগুলিকে প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী ও পুনরূত্থানবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয়, সেইসব আন্দোলনগুলিকে আধুনিকতার দৃষ্টিভজ্ঞিতে না দেখে তাদের স্বতস্ত্র ঐতিহাসিক বিকাশকে তিনি বুঝতে চান ।

ধর্ম সম্পর্কিত তার উল্লেখযোগ্য লেখালেখি হল ঃ

১.The Idea of an Anthropology of Islam (1986)
২.Genealogies of Religion:Discipline and Reasons of Power in Christianity and Islam (1993)
৩.Formations of the Secular:Christianity and Islam and Modernity (2003)

বর্তমান বিশ্বে ধর্মকে নিয়ে যে ধরনের সংকট আছে সে ক্ষেএে আসাদের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তার ধর্ম সম্পর্কিত আলোচনায় যে বিষয়গুলো সামনে আনা জরুরি তা হল ঃ

১. পশ্চিমা ক্ষমতা ও হেজেমনি ।
২. বর্তমান বিশ্বে ধর্মের যে সার্বজনীন সংজ্ঞা গ্রহন করা হয় সে প্রেক্ষিতে গিয়ার্টজ – এর সংজ্ঞার সমালোচনা ।
৩. ধর্ম ও ক্ষমতার সম্পর্ক ।

পশ্চিমা ক্ষমতা এবং হেজেমনি ঃ

পশ্চিমা ক্ষমতা এবং হেজেমনি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আসাদ বলেন যে, অপশ্চিমা দেশের লোকজন একরকম বাধ্য হয়ে পশ্চিমা ইতিহাস পড়াটা জরুরী মনে করেন কিন্তু পশ্চিমা দেশের লোকজন অপশ্চিমা ইতিহাস পড়াটা জরুরী মনে করে না । ইতিহাস নির্মানের ক্ষেএে বলা হয় ইতিহাস হচ্ছে প্রত্যেকের সক্রিয় বচন, সাধারন জনগণ তাদের নিজস্ব ইতিহাস নিজেরাই নির্মাণ করে । কিন্তু দেখা যায় স্থানীয় জনগণ তাদের নিজেদের ইতিহাসে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে । স্থানীয় জনগণ এর ধারণাটি বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে । এর মাধ্যমে আদিম, উপজাতি, সরল বা নিরক্ষর এ ধরনের শব্দগুচ্ছকে প্রতিস্থাপিত করা হচ্ছে । নৃবিজ্ঞানীরা অ-ইউরোপীয় সমাজগুলোতে যান। তারা স্থানীয়দের মধ্যে প্রবেশাধিকার পায় কিন্তু স্থানীয়দের ইউরোপীয় সমাজগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকে না । “স্থানীয়” বলার মধ্য দিয়ে প্রান্তিকীকরণ ঘটে । যেমন ঃ সৌদির ধর্মীয় পদ্ধতিকে “স্থানীয়” এবং আধুনিক ধর্মনিরেপেক্ষতা “সার্বজনীন” বলা হয় । বৃটেনে অভিবাসিত দক্ষিণ এশীয় জনগণকে শিকড়হীন হিসেবে দেখা হয় কিন্তু যেসব ব্রিটিশ কর্মকর্র্র্র্র্র্র্তা ভারতে বসবাস করে তাদের সেভাবে দেখা হয় না । এখানে তাদের মধ্যে একটি পার্থক্য রয়েছে তা হল ক্ষমতার । “স্থানীয়” জনগণ সম্পর্কে যে জ্ঞান তা স্থানীয় নয় বরং এটি একটি স্থির বিষয় হিসেবে পরিচিত ।

নৃবিজ্ঞানী শাহলিন এবং ওটনার এর মতে, অ-ইউরোপীয় জগতের সৃষ্টিশীলতামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বশাসনকে প্রতিরোধ করা হয় । মনে করা হয় বিশ্বের সকল মানুষ একই সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় বসবাস করে এবং এখন মানব সম্প্রদায়ের ভৌগলিক ও মনোবিদ্যাজগতে গতিশীলতা সম্ভব । আধিপত্যশীল ক্ষমতা গতিশীলতাকে ডিসকোর্স হিসেবে তৈরী করেছে। আধুনিকতা ও গতিশীলতাকে আন্তঃসম্পর্কিত করে দেখা হয় । দেখা যায় যারা যত বেশী গতিশীলতার মাঝে থাকতে পারে বা মানিয়ে নিতে পারে তারাই তত বেশী আধুনিক এবং এ বিষয়টি হেজেমনিতে পরিণত হয়েছে । এখানে পশ্চিমা ক্ষমতা এই বিষয়কে স্বাভাবিকতা প্রদান করে। এর মাধ্যমেই অ-ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ইউরোপীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করে । তাই এখানে গুরুত্ব্পূর্ণ হল কে নির্মাতা এবং কে নির্মাণের বিষয় । অ-ইউরোপীয় সমাজ এবং মানুষকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পশ্চাৎপদ হিসেবে উপস্থাপন করে ইউরোপীয় ক্ষমতাবান গোষ্ঠী । অপশ্চিমা সমাজকে নিজেদের মত করে উপস্থাপন করে পশ্চিমা সমাজ ।

আসাদের মতে, বর্তমানে একইভাবে ধর্মকেও নির্মাণ করা হয় । ধর্মকে ব্যক্তিক, আধ্যাত্মিক হিসেবে দেখার যে প্রবণতা তা খুবই সাম্প্রতিক এবং ধর্মকে এভাবে দেখার বিষয়টি হেজেমনিতে পরিণত হয়েছে । ধর্মকে বিজ্ঞান, আইন, রাজনীতি থেকে আলাদা করে দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি তা সবার মধ্যে এমনকি নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যেও দেখা যায় । তিনি দেখান, উনিশ শতকের যে নৃবিজ্ঞানীরা তারা মূলত সকল সমাজে ধর্মের উপস্থিতির কথা বলেন এবং তারা ধর্মকে আদিম বলে অভিহিত করেন এবং ধর্ম হতে বিজ্ঞান, আইন, রাজনীতি – এর সৃষ্টি বলেন । তবে তারা ধর্মকে দেখতে গিয়ে পশ্চিমা জ্ঞানকান্ড যেভাবে ধর্মকে দেখে তার থেকে বের হতে পারেননি । তারা ধর্মকে অনেকবেশী ঐতিহ্যবাহী এবং আইন ও বিজ্ঞানকে অনেক বেশী আধুনিক হিসেবে দেখেন । আসাদের মূল যুক্তির একটি অংশ হল সামাজিকভাবে চিহিৃত প্রথা, পূর্বশর্ত যা খ্রীষ্ট্রীয় মধ্যযুগে ধর্ম বলে বিবেচিত হত তা থেকে বর্তমান আধুনিক সমাজে যা ধর্ম বলে চিহিৃত হয় তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে । ধর্মকে বৃহৎ পরিসরে খ্রীষ্টানদের মতবাদ ও চর্চা, নিয়মনীতি সম্পর্কে তাদের যে সংলগ্নতা সেই প্রেক্ষিতে দেখতে হবে অর্থাৎ ধর্মকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা ক্ষমতা ও হেজেমনিকে বুঝতে হবে ।

Read More…

লিগ্যাল এইড ও আইনী নৃবিজ্ঞান

ভূমিকাঃ
আইন হল মানুষের জীবন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রক্রিয়া। মানুষ যখন থেকে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শুরু করলো তখন থেকেই সমাজে মানুষের আচার-ব্যবহারকে সমাজ উপযোগী করে তোলার জন্য আইনের উৎপত্তি হয়। নৃবিজ্ঞানে আইনকে বিশেষভাবে অধ্যয়ন করা হয় কারণ নৃবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সমাজের আইন অধ্যয়ন করার মাধ্যমে সেই সমাজ ব্যবস্থা ও মানুষের জীবনযাএা প্রণালীকে বুঝতে চেয়েছেন। তাছাড়া নৃবিজ্ঞানে যেহেতু “সংস্কৃতি” অধ্যয়ন একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে তাই সংস্কৃতির একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে সমাজে প্রচলিত আইনকে অধ্যয়ন করার প্রয়োজনীয়তা নৃবিজ্ঞানীরা অনুভব করেন। এই আইনকে অধ্যয়নের মাধ্যমে একটি সমাজের রীতি-নীতি বোঝা সম্ভব বলে তারা মনে করেন এবং আইন অধ্যয়নের উপর গুরত্ব দেন। মর্গান, ম্যালিনস্কি, ব্যাউনসহ প্রথম দিককার প্রায় সকল নৃবিজ্ঞানীরাই তাদের গবেষিত সমাজের আইন ব্যবস্থাকে বুঝতে চেয়েছিলেন। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় নৃবিজ্ঞানে আইন নিয়ে আলোচনা এর জন্মলগ্ন থেকেই হয়ে আসছে।

বাংলাদেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশই দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আইনী সচেতনতার যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে। এমনকি দারিদ্রতার কারণে তারা আইনী সহায়তাও নিতে পারে না। উন্নয়ন ডিসকোর্সে ‘ক্ষমতায়ন’ প্রত্যয়টি একটি বহুল আলোচিত প্রত্যয়। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও) ও বিদ্যা জাগতিক পরিসরে এর ব্যাপ্তি। সাধারনভাবে ‘ক্ষমতায়ন’ প্রত্যয়টি দ্বারা বোঝানো হয় কোন কিছু অর্জন, যার ফল হচ্ছে উন্নয়ন। গত তিন দশক যাবত বাংলাদেশের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে নারীদের ‘উন্নয়ন’ ও ‘ক্ষমতায়নের’ লক্ষ্যে বেশ কিছু এনজিও বিনামূল্যে আইনী সহায়তা দিয়ে আসছে যা কিনা ‘লিগ্যাল এইড’ নামে পরিচিত। বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদানকারী এ সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হল বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (BLAST)। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৩ সাল থেকে এই সহায়তা প্রদান করে আসছে। এছাড়াও যে সকল প্রতিষ্ঠান বা এনজিও এই সহায়তা প্রদান করে থাকে তা হল – আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নারীপক্ষ, নাগরিক উদ্যোগ, ব্রাক প্রভৃতি। ‘লিগ্যাল এইড’ মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও নারীদের পারিবারিক পরিসরে আইনী সহায়তা, ধর্ষণ মামলা, মীমাংসা, কোর্টের বদলে সালিশ কেন্দ্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান, অফিসে কোন অভিযোগ আসলে তার প্রেক্ষিতে উকিল নোটিশ প্রদান – এই ধরনের সহায়তা প্রদান করে থাকে। শুধু শহরে নয় আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় এ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলেও লিগ্যাল এইড সহায়তা প্রদান করে থাকে।

এ সকল বেসরকারী আইনী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে ‘আইনী নৃবিজ্ঞানে’র আলোকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। যে সকল প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদান করে তাদের কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল নারীর ‘অধিকার’ অর্জন ও ‘ক্ষমতায়ন’ নিশ্চিত করা। এ সকল উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ক্ষমতায়ন’ সম্পর্কিত উপস্থাপন এমনভাবে করে , যেন নারীর জন্য উন্নয়ন প্রদান করার মত একটি বিষয় (নাহার,২০০৭)। সে মতে ‘ক্ষমতায়ন’ প্রত্যয়টি পরিমাণগত একটি বিষয়, এখানে দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক অসম। তাই এখানে ‘ক্ষমতায়ন’ নারীর অর্জিত নয় বরং আরোপিত একটি বিষয়। ‘লিগ্যাল এইড’ মূলতঃ গ্রামীণ নারীদের কোন পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করছে, নারীরা এরূপ পদ্ধতিকে কি দৃষ্টিতে দেখছে বা লিগ্যাল এইড নারীদের উন্নয়ন তথা ক্ষমতায়িত করার মাধ্যমে তাদের জীবনে কীরূপ প্রভাব ফেলছে তা ‘আইনী নৃবিজ্ঞানে’র আলোকে ব্যাখ্যা করাই এ প্রতিবেদনের লক্ষ্য। আমি এখানে মূলত একটি এনজিও – বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (BLAST) – এর প্রেক্ষিতে আমার আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (BLAST)ঃ
১৯৯৩ সাল হতে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (BLAST) দরিদ্র ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা দিয়ে আসছে। বর্তমানে এই সংগঠনটি ১৯ টি ইউনিট ও ৫ টি ক্লিনিকের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে তার বিনামূল্যে আইনী সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্লাস্টের এই ইউনিট ও ক্লিনিক সমূহ বিনামূল্যে আইনী সহায়তার পাশাপাশি আইন বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি , বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য এডভোকেসি কার্যক্রমসহ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণার্থে ও জনস্বার্থে মামলা পরিচালনা করে থাকে। “Access to Justice for Relaisation of Human Rights & Advocacy for Empowerment of the Poor” – এই প্রকল্পের আওতায় ব্লাস্ট ২০০৫-০৬ সালে ৪৬২৯ জনকে আইন ও মামলা মিলিয়ে আইনী সহায়তা প্রদান করে থাকে।

বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদানই এই সংগঠনের মূল কাজ। প্রধানত যেসব কেইসগুলোতে তারা বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদান করে থাকে তা হল – নারী ধর্ষণ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর নিকট যৌতুক চাওয়া ও স্ত্রীর যৌতুক দিতে না পারায় তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শ্বশুর ও শ্বাশুরী কর্তৃক গৃহবধূ নির্যাতন, তালাকের ক্ষেএে দেনমোহরের টাকা আদায় ইত্যাদি। এসব কেইসগুলোকে প্রথমে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করার চেষ্টা করা হয়। যদি তা সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা না হয় তাহলে এর জন্য কোর্টে মামলা করা হয়। এভাবেই ব্লাস্ট দরিদ্র নারীদের সহায়তা করে থাকে।

Read More…

সামাজিক পুঁজি

Social Capital’- মূলত সমাজতত্ত্বের একটি ধারণা। এর সংজ্ঞায়নে বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা যায়। তবে সব সংজ্ঞায়নের বক্তব্যই অনেকটা এমন, ‘Something of a cure-all for the problem of modern society’. যেমন: কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা স্ক্রু ড্রাইভারের মতো কাজ করে সমাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

আলেজান্দ্রো পোর্টেস (১৯৯৮) তার লেখায় ‘Social Capital’- এর উৎস এবং সংজ্ঞায়নকে পর্যালোচনা করেছেন। তার কাজে বিভিন্ন জনের লেখালেখির মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে বর্দু, লোঈ এবং কোলম্যানের কাজ। লেখাটিতে ‘Social Capital’- উৎসের বিবেচনায় চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং এই উৎসগুলোর গতিশীলতাকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। গরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘Social Capital’- সম্পর্কিত সাম্প্রতিক লেখালেখিগুলো ধারণাটিকে ব্যক্তিগত সম্পদের পরিসর থেকে সম্প্রদায়গত, এমনকি জাতীয় সম্পদের পরিসর পর্যন্ত বি¯তৃত করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমাজতত্ত্বীয় পরিসর থেকে নিত্যদিনকার ভাষা বলয়ে রপ্তানী হওয়া ধারণাগুলোর মধ্যে ‘Social Capital’- সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ধারণা। তবে সাম্প্রতিক এই জনপ্রিয়তাকে পাশকাটিয়ে যদি একটু ভেতরে উঁকি দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, সমাজতাত্ত্বিকদের কাছে ‘Social Capital’-এর ধারণা মোটেও নতুন কোন ধারণা নয়।

লক্ষ্যণীয়, ব্যক্তির দলে তথা দলীয় জীবনে অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সমাজতাত্ত্বিক ডুর্খেইমের কাজে আমরা দলীয় জীবনের অংশগ্রহণের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। ডুর্খেইম তার কাজে দেখান, দলীয় জীবনে গুরুত্ব প্রদান ব্যক্তিজীবনে অস্বাভাবিকতা এবং আত্মনাশের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। আবার মার্ক্স তার আলোচনায় Class-in-itself এবং Class-for-itself – সম্পর্কিত আলোচনার মধ্যদিয়ে Class-for-itself – কে গতিশীল এবং কার্যকরী ধারণা হিসেবে উপস্থাপন করেন, যা দলীয় অংশগ্রহণের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এ সমস্ত দিক বিবেচনায় বলা যায়, ‘Social Capital’- সমাজতত্ত্বের প্রথমদিকের অন্তঃবর্তী দর্শনকে স্রেফ পুর্নঃধারণায়ন করেছে।

পোর্টেস তার লেখায় বলছেন যে, আমাদের জন্য কিছূ প্রশ্ন করতে পারা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন: কেন সাম্প্রতিক সময়ে ‘Social Capital’- এর ধারণা এমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো? কিংবা কেন পলিসি বাস্তবায়নে গতানুগতিক অন্যান্য অনুষঙ্গের ভিড়ে ‘Social Capital’- ঠাঁই করে নিলো?

Social Capital’- এর মহত্ব এবং অতীত পুনর্মূল্যায়নের মধ্যদিয়ে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা মূলত দু’টি উৎস থেকে এসেছে।

প্রথমত:Social Capital’- ধারণাটি মূলত আলোকপাত করে সমাজ অন্তর্ভুক্তির ইতিবাচক দিকগুলোতে। পাশাপাশি এটি সমাজ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম আকর্ষণীয় বিষয়গুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখে।

দ্বিতীয়ত: এটি এর ইতিবাচক প্রভাবগুলোকে পুঁজি সম্পর্কিত বি¯তৃত আলোচনার ফ্রেমওয়ার্কে স্থাপন করে। এটি যেন বলে দেয়, “দেখুন, ব্যক্তি মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদ আর হৃষ্টপুষ্ট ব্যাংক এ্যাকাউন্টের বিবেচনায় পুঁজির অ-অর্থনৈতিক ধরন কতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তির আধার আর প্রভাব বিস্তারী হতে পারে।” Read More…